সময় ব্যবস্থাপনা এবং কর্মদক্ষতা বাড়ানোর উপায়

Time Management

আমরা সবাই একদিনে ২৪ ঘণ্টা সময় পাই। তবে কতঘণ্টা সঠিকভাবে কাজে লাগাই বা অপচয় করি তা যদি নিজের কাছে জবাবদিহিতা করেন তবে নিজেই আঁতকে উঠবেন এতটুক আমি নিশ্চিত! চলুন কিছু বিষয়ে আলোচনা করা যাকঃ

  •  সোশ্যাল মিডিয়া এবং আমাদের প্রডাক্টিভিটিঃ আমাদের সারাদিনের একটা বড় সময় কাটে ফেইসবুকে। এটি চরমভাবে আমাদের এনার্জি লেভেল এবং প্রডাক্টিভিটি কমিয়ে ফেলে। ফোনের Digital Wellbeing এপ বা Your Hour এপটি প্লেস্টোর থেকে নামিয়ে নিন। নিজেই দেখুন কোন এপ প্রতিদিন কতক্ষণ ধরে ব্যবহার করছেন। একটু কাজ থেকে অবসর পেলেই আমরা ফেইসবুকে ঢু মারি, কিন্তু এই ঢু মারার রেশটা থেকে যায় অনেক্ষণ যা আমাদের কাজের সময়ও মনোযোগ কমিয়ে দেয়। ফেইসবুক অনেক কারণেই আমাদের ব্যবহার করতে হয় তবে তা যেন খুব বেশী পরিমাণে আমাদের ক্ষতি করতে না পারে সেটা ভাবাও প্রয়োজন। আমি নিজেও অজান্তেই এর এডিকশনের স্বীকার হয়েছি বহুবার যা আমাদের প্রডাক্টিভিটি লেভেলকে কমিয়েছে বেশ অনেক! ফেইসবুক ইউজটা খুব দরকার হলেও কিছু ইনিশিয়েটিভ নেয়া উচিৎ। আমি সাজেস্ট করব পিসিতে ব্রাউজ করার সময় News Feed Eradicator ক্রোম এক্সটেনশনটি ব্যবহার করতে পারেন যা আপনার ফেইসবুক নিউজফিডকে ব্লক করে দিবে যা বাঁচিয়ে দিতে পারে অনেক সময়! এছাড়া যদি চান ফেইসবুক বা যেকোন ওয়েবসাইট থেকে নিজেকে দূরে রাখতে তবে Self Control ক্রোম এক্সটন ব্যবহার করতে পারেন। আর ফোনের ক্ষেত্রে ফেইসবুক এপ/মেসেঞ্জার আন ইন্সটল করাই বোধহয় ভাল সিদ্ধান্ত কেননা ফোনে এসব এপ ব্যবহার এবং সময় নষ্ট করাটা বেশ সহজ। বিশেষ প্রয়োজনে কষ্ট করে ব্রাউজার দিয়ে ফেইসবুক ইউজ করবেন।  😛 
  • ডেইলি প্ল্যানিংঃ পরের দিন কি করবেন তা আগের দিনই নির্ধারণ করে দেয়াটা উত্তম! আমি ব্যাক্তিগতভাবে প্রচুর এপ ইউজ করতাম যেমন গুগল কিপ/ মাইক্রোসফটের টু ডু লিস্ট ইত্যাদি। তবে সব কিছুর পর এখন মনে হয়েছে ফিজিক্যাল নোট/ডায়েরি ব্যবহারই উত্তম। নরমাল ডায়েরী ইউজ করতে পারেন তবে যদি একদম বেস্ট কোন কিছুর সাজেশন চান তবে আমি বলব ProPlanner কিনে নিতে। এটি আসলেই জোশ একটি প্ল্যানিং ডায়েরি যেখানে সাপ্তাহিক/দৈনিক এবং মাসিক প্রয়োরিটি/ফোকাস/টার্গেট ইত্যাদি লিখে রাখা এবং ট্রাক করা যায় সহজেই। আর আপনারা চাইলে Notion এপটি ইউজ করতে পারেন যদি ফিজিক্যাল ডায়েরি ব্যবহারে অনিচ্ছুক হন।
  • নিজের কাছে জবাবদিহিতাঃ আমাদের ভুল হবে তা থেকে শিক্ষা নিব এটাই স্বাভাবিক। তবে যখন নিজের কাছে নিজেই জবাবদিহিতা দিবনা তখন নিজের ভুলগুলোও বুঝতে পারবনা। দিনের একটি সময়ে অন্তত ১০ মিনিট নিজের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি ইদানীং এতে সুবিধা হয় নিজেকে প্রশ্ন করার/উত্তর নেয়ার এবং ভাল মন্দ বুঝার! আমি বেশ ফল পাচ্ছি এতে এবং আপনিও ট্রাই করতে পারেন। 
  • প্রক্রাস্টিনেশন এবং পার্ফেকশন নিয়ে আমার মতামতঃ  ‘Perfect” is the enemy of ”good” – একদম মোক্ষম সময়/সুযোগের জন্য অপেক্ষা না করে শুরু করে দেয়া উচিৎ যেকোন কাজের ক্ষেত্রে। আমার জীবনে আমি অনেক সময় নষ্ট করেছি এই পারফেক্ট সময়/সুযোগের অপেক্ষায়। কাজটি শুরু করে দেয়া উচিৎ দ্রুত, ভুল হবেই আর সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ইমপ্রুভ করতে হবে। ”You can’t edit a blank page” – প্রাকটিক্যালি যেকোন কাজ শুরু করলে এমনিতেই দেখা যায় নিজের ভুল বের করে শুধরে নেয়া সম্ভব কিন্তু কিছুই না করে থিওরিক্যাল চিন্তা ভাবনায় ডুবে থাকাটা আসলে প্রচণ্ড রকমের ভুল সিদ্ধান্ত। ”Procrastination” জিনিসটার মত বাজে জিনিস খুব কমই আছে। নরমালি একটা কাজের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের কাছে ৭-১০ দিন সময় নিলে দেখা যায় আমি সেই পুরো সময়টাই কাজে লাগাই। অথচ প্রকৃতপক্ষে সেই কাজ ৪-৫ দিনের মাঝে করা সম্ভব। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে সেই কাজগুলো একদম শেষের দিনই জমা দেই। নিজের কাজের জন্য নিজেই ডেডলাইন সেট করে দেয়াটা গুরুত্বপুর্ণ। 
  • Pomodoro Technique: এই টেকনিক এর মুল কথা হচ্ছে ২০ মিনিট কাজ করে ৫ মিনিটের একটি বিরতি নেয়া, তাতে করে কাজের প্রডাক্টিভিটি বাড়ানো। এটা সবার ক্ষেত্রে কাজ নাও করতে পারে যেমন স্টাডির ক্ষেত্রে তবে আমার ক্ষেত্রে বেশ কাজে লেগেছে। Pomodoro এপ/ক্রোম এক্সটেনশন রয়েছে, ফোন বা পিসিতে ট্রাই করে দেখতে পারেন। 
  • Pareto Principle & Three Seconds Rule:  ধরেন শুয়ে আছেন এবং একটি কাজ করতে চাচ্ছেন তবে কিছুটা গড়িমসি করতেছেন শুরু করার জন্য। এসব ক্ষেত্রে এই তিন সেকেন্ড রুল খুবই ইফেক্টিভ। মাথায় আসা মাত্র শুরু করে দিবেন তিন সেকেন্ডের মাঝেই। আর Pareto Principle বলতে বুঝায়ঃ যেকোন কাজের আউটপুট আসে সেটার ১০০ ভাগের ২০ ভাগ থেকে। ধরেন আপনার একটি দোকান আছে, সেখানের বেস্ট সেলিং আইটেম ১০০ টির মাঝে ২০ টি হবার সম্ভাবনাই থাকে। তেমনি কাজের ক্ষেত্রেও দেখা যায় অনেক কিছুই ট্রাই করতেছেন কিন্তু আপনার ইফোর্টের সেই ২০ ভাগই আপনাকে মুল সফলতা এনে দিচ্ছে। সেটা আইডেন্টিফাই করে সেই কার্যকর ইফোর্ট নিয়ে কাজ করলে সফলতা বৃদ্ধি পাবে অনেকাংশেই। 
  • ঘুম এবং কায়িক পরিশ্রমঃ মস্তিষ্ক ভাল কাজ করেনা যদিনা আপনার ভাল ঘুম না হয়। ঘুম অন্তত পক্ষে ৭ ঘণ্টা প্রয়োজন কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা সঠিক সময়ে ঘুমানোটা অতীব জরুরী। রাত ১০-১১ টার মাঝে ঘুমানো উত্তম কেননা এই সময় আমাদের মেলাটোনিন রিলিজ হয় যা ঘুমে আচ্ছন্ন করার একটি কেমিক্যাল। রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে এটি নিঃসৃত হওয়া কমে যায়। এবং ফজরের ওয়াক্তে ঘুম উঠে পরাই শ্রেয়! সকালের সেশনটা বেশ প্রডাক্টিভ কাটানো যায় এই নিয়মে চললে। এটি অভ্যাসের ব্যাপার এবং আমি নিজেও নিয়মিত হতে পারিনি এখন অব্দি তবে চেষ্টা চালাচ্ছি! আর কায়িক শ্রম/রেগুলার হাটা চলা করলে ঘুম টাও ভাল হয়। পরিশ্রম করলে সেদিন ঘুমের মান বেশ ভাল হয় সেটা লক্ষ্য করলেই বুঝবেন।


Share This Article

Follow Me On

2-removebg-preview

About Touhid

Hey! My full name is S M Touhidul Islam, a marketing professional and tech enthusiast from Bangladesh.

Share This Article