নাটোর ও রাজশাহী ভ্রমণ অভিজ্ঞতা

Uttara Ganavaban

অনেকদিন থেকেই ইচ্ছে নাটোর এবং রাজশাহীতে একটু ঢুঁ মেরে আসার। কিন্তু সময় সুযোগ হচ্ছিল না সেভাবে। সব কিছু ব্যাটে বলে মিলার অপেক্ষা না করে বন্ধু রাকিবের সাথে দু’দিনের ঘুরার পরিকল্পনা নিশ্চিত করলাম। খুব যে সুন্দর এবং গুছানো প্ল্যান ছিল সব কিছুর তা নাহ। যা হবে দেখা যাবে নীতিতে ২১ জানুয়ারী, শুক্রবার সকালে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে চেপে নাটোরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

ট্রেন ৩০ মিনিটের মত বিলম্বে ছাড়লেও সঠিক সময়েই নাটোর স্টেশনে পৌঁছাই ১২ঃ৩০ এর দিক। স্টেশন থেকে অটোতে মাদ্রাসা মোড়ে নেমে পরি এবং নাটোরের বেশ নামকরা পচুর হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নেই। এর পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে উত্তরা গণভবনের দিক রওনা দেই।

উত্তরা গণভবন - দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ী
উত্তরা গণভবন – দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ী

উত্তরা গণভবনের আসল নাম দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি যা আঠার শতকে নির্মিত হয়। ১৯৭২ সালে শেখ মুজিব এটির নামকরণ করেন উত্তরা গণভবন যা এখন উত্তরাঞ্চলের গভর্মেন্ট হাউস হিসেবে ব্যবহূত হয়। রিক্সায় চড়ে শহরের বিভিন্ন স্থাপনা দেখতে দেখতে উত্তরা গণভবনে পৌছে গেলাম। ২০ টাকা মুল্যের টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকলাম।

Uttara Ganavaban
Uttara Ganavaban

বেশ অনেকটা যায়গাজুড়ে বিস্তৃত তৎকালীন এই রাজবাড়ীটি। প্রসাদের চারপাশে বেশ কয়েকটি পুকুর দেখেছিলাম। গোলপুকুর, পদ্মপুকুর, শ্যামসাগর, কাছারিপুকুর, কালীপুকুর, কেষ্টজির পুকুর নামে ছয়টি পুকুর রয়েছে, যদিও সবগুলো আলাদাভাবে সেভাবে ঘুরে দেখিনি। বেশ বড়সড় একটি গার্ডেন রয়েছে, রাজা নাকি গার্ডেন তৈরীতে যা যা লেগেছিল সেসব ইতালী থেকে এনেছিলেন।

প্রাসাদের এক সাইডে আবার একটি ছোট খাট চিড়িয়াখানা রয়েছে। সেখানে কিছু হরিণ/বানর/ময়ূরসহ বেশ কিছু পশু-পাখি রয়েছে। এটি আমাকে খুব বেশি না টানলেও উল্লেখযোগ্য এবং অসাধারণ লেগেছে উত্তরা গণভবনের সংগ্রহশালা।

এখানে রাজাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র রয়েছে যেমনঃ খাট/সিংহাসন/বাথট্যাব/তলোয়ার/আসবাবসহ অনেক কিছুই! এটা আমার কাছে বেশ লেগেছে, এখানে ঢুকতে গেলে অবশ্য এন্ট্রি ফি হিসেবে ৩০ টাকা দিতে হবে আলাদাভাবে।

যাহোক উত্তরা গণভবন ঘুরে রওনা দিলাম রানী ভবানীর রাজবাড়ীর দিকে। খুব দূরে নাহ, কাছেই অবস্থিত সেটি। পৌছেই টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করে দেখলাম রাজপ্রসাদ ঘোরার জন্য ঘোড়ার গাড়ির ব্যবস্থা রয়েছে।

রানী ভবানীর রাজবাড়ী
রানী ভবানীর রাজবাড়ী

১০০ টাকা চুক্তিতে পুরো রাজবাড়ীটি ঘুরে দেখলাম। রানী ভবানী ছিলেন ইংরেজ শাসনামলের নাটোরের একজন জমিদার। প্রজাদের প্রতি তার ছিল অসীম ভালবাসা, শুনেছি তিনি নাকি প্রজাদের খারাপ সময়ে খাজনা মওকুফ করেছিলেন একবার। 

যাহোক পুরা রাজবাড়ী ঘুরতে অনেক কিছুই দেখলাম। এখানে রাজমহলের পাশাপাশি/ছোট তরফ এবং বড় তরফের প্রসাদ/ফাঁসির মঞ্চ/কারাগারসহ অনেক কিছুই দেখলাম। তবে যা বুঝলাম, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে এখানে। উত্তরা গণভবন সঠিকভাবে দেখভাল করা হলেও এখানে তা করা হচ্ছেনা মোটেও!

রাজপ্রাসাদ
রাজপ্রাসাদ

নাটোর এসেছি কিন্তু বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা খাবনা তা কি করে হয়? চলে গেলাম কালী মন্দিরের পাশে দ্বারিখ ভান্ডারে। এটাই আদি এবং আসল কাঁচাগোল্লার দোকান। ৪৫০ টাকায় এক কেজি নিলাম বাসায় নিয়ে যাব বলে।

সন্ধ্যা নেমে এল বুঝি! প্ল্যান মাফিক এখন আমাদের যাবার কথা পুঠিয়া রাজবাড়ী। বিকেলের নাস্তা করে রওনা দিলামও বটে! কিন্তু পুঠিয়ায় তেমন কোন হোটেল না পেয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ঘন্টাখানেকের মাঝে আমের শহর রাজশাহীতে পৌছুলাম আমরা। লক্ষীপুর বাজারে একটি হোটেলে উঠলাম রাতটা কাটাবো বলে। রাতের রাজশাহী কেমন তা দেখতে দেখতে একটু হাটলাম এবং অদুরের একটি র‍্যান্ডম হোটেলে বট দিয়ে ভাত খেয়ে নিলাম। খারাপ বলবনা, ভালই লেগেছিল!

সকালে উঠে চলে গেলাম পদ্মার পাড়। মর্নিক ওয়াকটা আজ এখানেই করব, হাহা!

পদ্মার পাড়
পদ্মার পাড়

যাহোক বেশ ঘুরলাম আশেপাশে এবং অনেকখানি ক্লান্তই হয়ে গেলাম বলা চলে। নাস্তা সেরে নিয়ে চললাম বাংলাদেশের ৩য় প্রাচীনতম কলেজ ঘুরতে – রাজশাহী কলেজ!

রাজশাহী কলেজ
রাজশাহী কলেজ

কিন্তু গেটে গিয়ে দেখলাম করোনার প্রকোপের কারণে ঢুকতে দিচ্ছেনা সবাইকে। মাস্টার্সের ফর্ম পূরণের জন্য স্টুডেন্টদের অবশ্য ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। আমি সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বললাম আমারো ফর্ম পূরণ আজ। আমি নিজেও অবশ্য মাস্টার্সের ছাত্রই তবে এখানকার না। 😛

রাজশাহী কলেজের স্ট্রাকচার/ভবনের ডিজাইনসহ পুরো ক্যাম্পাসটা বেশ সুন্দর। এখন অব্দি এত সুন্দর কলেজ বোধহয় আর দেখিনি, প্রশংসা করার মতই! কিছুদুর পর পর মনীষীদের সুন্দর সুন্দর উদ্ধৃতি ঝুলায় দেয়া আছে। ভালই লাগছিল কলেজটা ঘুরতে!

এরপর চলে গেলাম বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে। এটি বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর!!

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর

আমি নিজেও জানতাম না যে, প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের দিক থেকে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সংগ্রহশালা। বিস্তারিত জানতে বরেন্দ্র জাদুঘরের উইকিপিডিয়ায় দেখতে পারেন।

সবশেষে, হোটেলে চেক আউট করে ১ টার দিক চলে গেলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বেশ কয়েকটি ছোট ভাই উষ্ণ আমন্ত্রণ জানালো এবং ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখাল।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ঘুরাঘুরি শেষে সবাই মিলে কাটাখালীতে চলে গেলাম কালাভুনা খেতে। এটা অনেক জনপ্রিয় এখানকার। খাবার স্বাদ বেশ ভাল ছিল, খিদাও যেমন লাগছে ভাই, প্রচুর খেয়েছি সেদিন!!

বিনোদপুরে ছোট ভাইয়ের রুমে গিয়ে একটু জিরিয়ে নিলাম। চা-আড্ডা দিতে দিতে রাত হয়ে গেল। প্ল্যান অনুযায়ী ১০ টার দিক নাটোরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম বাসে। এখান থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে নাটোর। নাটোর থেকে কুড়িগ্রামের ট্রেনের টিকিট কেটেছিলাম সন্ধ্যায়। তবে ট্রেন ১ঘণ্টা বিলম্বে আসলো রাত ২ টার দিক। ট্রেনে ঘুমোতে ঘুমোতে অনেকখানি স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসলাম প্রাণের শহর কুড়িগ্রামে!

মিস হয়ে গেল পুঠিয়া রাজবাড়ী এবং বগুড়া শহর ভ্রমণ। একটা কথা কি জানেন? জীবনে সব কিছু পেতে নাই, আর সব কিছু ঘুরে শেষ করতে নাই। যাব হয়তো আরেকদিন এসব অপ্রাপ্তির অবসান ঘটাতে! 😛

ভ্রমণের সময়কালঃ জানুয়ারী ২১, ২০২২

Share This Article

Follow Me On

2-removebg-preview

About Touhid

Hey! My full name is S M Touhidul Islam, a marketing professional and tech enthusiast from Bangladesh.

Share This Article