কুড়িগ্রামে আমার পছন্দের কিছু রেস্টুরেন্ট এবং খাবার সমগ্র

Kurigram Famous Foods

কুড়িগ্রাম এক অপরূপ জেলা, যেখানে কেবল মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যই নয়, সুস্বাদু খাবারেরও এক অফুরন্ত ভাণ্ডার লুকিয়ে আছে। আজকের ব্লগ পোস্টে আমি আপনাদের সাথে কুড়িগ্রামের কিছু জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট এবং খাবার সম্পর্কে শেয়ার করবো যেগুলো আমার কাছে বেশ পছন্দের।

  • রুপসী বাংলার মোগলাই আমার বেশ ভাললাগে। দাম পরবে ৫০ টাকা তবে মান সব মিলিয়ে ভালই লাগবে এটা মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। আগে বিজিবি ক্যান্টিনের মোগলাই এবং সসের ফ্যান ছিলাম তবে এখন মোগলাই এর মান বেশ খারাপ হয়ে গেছে। আর হ্যাঁ, মোগলাই খাওয়া শেষে ১৫ টাকা দিয়ে এখানকার স্পেশাল এক কাপ চা খেতে ভুইলেন নাহ। এখানকার গ্রিল আমার ভাল্লাগেনা, তাছাড়া আমি গ্রিলের খুব বড় ফ্যানও নাহ। ফালুদা/নান/হালিম ট্রাই করে দেখতে পারেন আর সকালে আসলে সিঙ্গাড়াও খেতে পারেন। খারাপ লাগবেনা। কুড়িগ্রামে এদের সিঙ্গারা আমার ভাল লাগে সব থেকে, ভিতরে সামান্য একটু খাসির কলিজা পাবেন 😛

  • উলিপুরের মাংসের চপ এবং ক্ষীরমোহন বেশ প্রসিদ্ধ। সেখানে গেলেই এই দুইটা জিনিস ট্রাই করতে ভুইলেন নাহ। পাবনা হোটেল বা পাশেই ওকে হোটেলে দুইটা আইটেমই পাওয়া যায়। তবে রিকমেন্ডেড হচ্ছে পাবনা হোটেল কারণ ক্ষীরমোহনের জন্য তারাই সম্ভবত বিখ্যাত। তাদের শাখা আছে কুড়িগ্রামের শাপলায় – পাবনা মিষ্টান্ন ভান্ডার। 
  •  কলেজ মোড়ের বগুড়া হোটেলে পুড়ি অত্র কুড়িগ্রামের মাঝে বেশ প্রসিদ্ধ বলা যায়। দাম বেড়ে ৭ টাকা হলেও ছোট্ট ঐ দোকানে ভিড় সবসময়ই লেগেই থাকে। সাথে চাইলে রসমালাই নিতে পারেন, এখানকার রসমালাইটাও বেশ ভাল লাগে। মিষ্টিজাতীয় জিনিস খেলে চা ভাল্লাগবেনা তবে এই দোকানের চা টাও খারাপ নাহ 😛

  •  Zaman INN(খলিলগঞ্জে) এ যাওয়া হয়নি তাই খুব বেশী কিছু বলতে পারছিনা তবে ভাল পরিবেশে কিছু খেতে চাইলে এখানে যেতে পারেন। নাচোস/থাই সুপ ইত্যাদির বেশ প্রশংসা শুনেছি লোকমুখে। সময় সুযোগ করে সামনে যাব ইনশাআল্লাহ্‌, তখন আমার অভিজ্ঞতাটাও এড করে দিব সম্ভব হলে।

  •  ধরলার পাড়ে খড়কূটো রেস্টুরেন্টে বেশ কিছু আইটেম ট্রাই করেছি। চিকেন চাপ/ফালুদা/ফ্রাইড রাইস ইত্যাদি। এরা হাল্কা দাম বেশী রাখে তবে ওভারল খারাপ বলার মতনা। ধরলার পরিবেশে নদীর কাছে বসে খেলে সব কিছুই ভাল্লাগবে। আর ব্রিজ পার হয়েই সাইডের দোকানগুলোতে চা এবং চপ ট্রাই করতে পারেন তবে খুব বেশী জোশ হবে এমন নাহ। 
  •  ত্রিমোহনীর কালাম ভাইয়ের চটপটি আমার কাছে সবসমই সেরা ছিল এবং সেরা থাকবে। কুড়িগ্রামের যেকোন স্ট্রিট ফুডের চেয়ে এখানকার চপ আইটেমগুলা সেরা! আর তিনি খুব সম্ভবত ভাল মানের তেল ব্যবহার করেন। চটপটি কিংবা স্ট্রিটফুড আইটেম ভাল লাগলে, আমি অবশ্যই রিকমেন্ড করব এখানে একদিন হলেও খেতে। চটপটি ১৫-২০-৩০ টাকার বাটিতে পাওয়া যায় এবং চপগুলা ৫ টা পিস। কালাম ভাইয়ের চটপটি দোকান সাধারনত সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। 

     

  • পুরাতন বাজারে সমবায় মার্কেট পার হয়েই মৌচাক হোটেলে ১-৭ টাকার কিছু আইটেম পাওয়া যায় যেমন ছোট পুড়ি/সামুচা/সিংগারা/পিয়াজু। এসব বেশ ভালই লাগে। আর এখানকার স্পেশাল আইটেম হচ্ছে ছোট খুরমা এবং জিলাপী (কুড়িগ্রামে বেস্ট- তবে দামটা কিছুটা বেশী রাখে)। ১ টাকার দোকান হিসেবেই পরিচিত এটি।

  • ঝন্টুর দোকানের পুড়ি আর আলুর ডাল বেশ প্রসিদ্ধ অনেক আগে থেকেই। আগে তো অবশ্যই সেরা ছিল তবে এখন পুড়ির মান কিছুটা ড্রপ করেছে বলে মনে হয় আমার কাছে। তবুও মাঝে মাঝে ট্রাই করি আর আপনারাও ট্রাই করতে পারেন। 😛 

  • SS Pump এর সামনে মীম হোটেল বিখ্যাত তাদের ১৪০ টাকা প্যাকেজের জন্য। গরুর মাংস/অনেক ধরণের ভর্তা ভাজি আর আনলিমিটেড ভাত/ডাল। দুপুরে বেশ ভিড় থাকত, এমনকি সিরিয়াল দিয়ে বসে খেতে হত। তবে এখন দোকানের স্পেস বড় করেছে তাই এই ঝামেলায় পরতে হবেনা আর।

     

  •  ভোকেশনাল মোড়ের স্বপ্ননীল ফুচকা হাউজের ফুচকার মান কুড়িগ্রামে আনবিটেবল। আমার প্রিয় দই ফুচকা। তবে ঝাল ফুচকাও খারাপ নাহ। ফুচকা লাভারস কেউ থাকলে এটা মিস করা উচিৎ হবেনা! এছাড়াও তারা নতুন কিছু আইটেম সংযোজন করেছে যেমন লুচি/চিকেন চাপ ইত্যাদি। আর দোকানের ডেকোরেশনও বেশ সুন্দর করেছে!

  •  ঠান্ডা দিনে ভাপা পিঠা ট্রাই করতে চাইলে অবশ্যই ভোকেশনাল চলে আসবেন এবং তাদের স্পেশাল ২০ টাকা দামের ভাপাটা ট্রাই করবেন। উনার ভাপা আমি সেই ছোট বেলায় (১৫+ বছর হয়ে গেছে) এডভান্স কোচিং যেতে রেগুলা খেতাম। তখন থেকেই তাঁর ফ্যান আমি।

  • গুয়াতি পাড়ার চাচীর দোকানের চপের বেশ সুনাম রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের চপ/পিয়াজু পাওয়া যায় এখানে। ট্রাই করে দেখতে পারেন যদি স্ট্রিট ফুড/ভাজাপোড়া খেতে চান।

  • দাদামোড়েই একটি চপের দোকান আছে। সেখানে বিভিন্ন ধরণের চপ পাওয়া যায়। ট্রাই করতে পারেন। চপ ছাড়া অন্যান্য আইটেম যেমন চটপটি পাওয়া যায় তবে সেগুলা একদমই ভাল লাগেনি আমার কাছে। 

  • বগুড়া হোটেল (সুপার মার্কেটের ভিতর)- তাদের সকালের খিচুড়িটা বেশ ভাল হয়। তবে ৮ টার পর গেলে আর স্টকে থাকেনা। হেহে। এছাড়াও তাদের পুড়ি/ডাল ভাল্লাগে। আর ২য় তলায় তাদের Well-decorated রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে নান/হালিম সহ গ্রিল/বিরিয়ানী পাওয়া যায়। বিরিয়ানি ভাল্লাগেনাই তাদের তবে নান/হালিম ভালই লেগেছে আমার কাছে।

  •  ইসলামী ব্যাংকের নিচে শীতকালে চিতুই পিঠা পাওয়া যায় আর সাথে থাকে কয়েকধরণের ভর্তা। ১০ টাকার এই জিনিস তো মিস করার মতনা। ট্রাই করে দেখুন! তারা ভাপা পিঠাও বিক্রি করে তবে খুব একটা ভাল্লাগেনাই সেটা।

  • নতুন বাজারের গলিতে চপ/গুড়ের জিলাপির দোকান আছে তবে এগুলা আমার কাছে একদমই সুবিধার লাগেনা খারাপ তেলের কারণে। গুড়ের জিলাপি এখানে ছাড়া তেমন কোথাও সম্ভবত পাওয়া যায়না। তাই খুব খেতে ইচ্ছে করলে এসে ট্রাই মাইরেন। 

  •  বিরিয়ানী হাউজ সেভাবে ভাল নেই। তারপরও মাঝে মাঝে খেতে ইচ্ছে করলে নবাব এবং নান্না বিরিয়ানী হাউজে ঢুঁ মারতে পারেন। শাপলা বা কলেজ মোড়েই পেয়ে যাবেন। 

  • চা খেতে খেতে আড্ডা দিতে চাইলে কলেজ মোড়ের বাবুর দোকানের চা নিয়ে ফাকা যায়গাটাতে বন্ধুদের নিয়ে গল্প বা আড্ডা দিতে পারেন। আমি নিজেও শেষ বিকেলে বা সন্ধ্যায় প্রায় নিয়মিতই সেখানে এক কাপ চা খাই। সেখানকার চা যে বানায় তিনি আর্জেন্টাইন ফ্যান হওয়ায় আমার চায়ে বেশী দুধ দেন একটু তাই প্রমোট করলাম। বলতে পারেন এটা পেইড প্রমোশন। হেহে। আর রং চা খেলে কলেজ মোড়েই সনজিত দাদার সেলুনের পাশের দোকানে চা খেতে পারেন/আদা দিয়ে ভাল ভাবেই চা খাওয়ান।
  •  স্পেশাল মেনশন দিতে চাই এরশাদুল ভাইকে। স্টেডিয়ামের স্তুম্ভের পিছনে উনার দোকান ছিল। সেই ২০১২-১৩ এর দিক থেকে রেগুলার চা খাইতাম। প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার আগে বা পরে ঢু মারতাম আর বন্ধুদের সাথে জম্পেশ আড্ডা হত। তাঁর চা নিঃসন্দেহেই কুড়িগ্রামের সেরা চা ছিল। কিন্তু এখন তাঁর সেই দোকান আর নেই। 

কুড়িগ্রামের রেস্টুরেন্ট আর খাবারের দোকানের তালিকা অনেক বিশাল। এই পোস্টে শুধু আমার কিছু পছন্দের জায়গা নিয়ে লিখলাম। আপনার মতামত বা পছন্দের কোনো জায়গা থাকলে, কমেন্টে লিখতে পারেন। কুড়িগ্রাম সম্পর্কিত আরো তথ্য পেতে এই ওয়েবসাইটটি (kurigram.info) ভিজিট করতে পারেন। আশা করি, এই তথ্য আপনাদের কাজে লাগবে। কুড়িগ্রামে এসে সুন্দর সব জায়গা ঘুরে দেখার পাশাপাশি, এখানকার মজাদার খাবারও উপভোগ করবেন।

Share This Article

Follow Me On

2-removebg-preview

About Touhid

Hey! My full name is S M Touhidul Islam, a marketing professional and tech enthusiast from Bangladesh.

Share This Article