দিনাজপুর বাইক ট্যুরের অভিজ্ঞতা

ছোটবেলায় কোচিং থেকে যেসব পিকনিকে যেতাম তার মাঝে অন্যতম স্থান ছিল দিনাজপুরের স্বপ্নপুরী। তবে দিনাজপুরের বাকি যেসব দর্শনীয় কিছু স্থান রয়েছে সেগুলোতে সেভাবে যাওয়া হয়ে উঠে নি। এবার তাই সিদ্ধান্ত নিলাম দিনাজপুরের অলি গলিতে একটু ঢু মেরে আসব বাইকে চেপে, এবং সেটা একদিনেই!

আমিসহ মোট ৪জন মিলে বাইকযোগে সকাল ৭ টার কাছাকাছি সময়ে যাত্রা শুরু করলাম। প্রায় ৮ টার দিক রংপুরে পৌছে বৈশাখী হোটেলে নাস্তার পর্বটি সেরে নিলাম। এই হোটেলের চা কিন্তু আমার জোশ লাগে! আর খিচুড়িটাও বেশ ছিল, খেয়েছিলাম আমার প্রিয় কলিজাভুনা দিয়ে।  যাহোক এরপর পুনরায় দিনাজপুর অভিমুখে রওনা দিলাম। তারাগঞ্জ ক্রস করতেই হাতের বায়ে লক্ষ্য করলাম ”I Love Rangpur” লিখা একটি ফলক, এটি তারাগঞ্জ ইকোপার্ক খুব সম্ভবত। যায়গাটা ভালই লাগলো তাই কিছুক্ষণের একটা ব্রেক নিয়েই নিলাম। বাইক ট্যুরের এই এক সুবিধা/ফ্লেক্সিবিলিটি আছে বলতে পারেন! যখন ইচ্ছে হলো, টুপ করে একটু থেমে বিশ্রাম বা আশেপাশের যায়গায় ঢু মেরে নিতে পারবেন! 

দশটার দিক আমরা দিনাজপুর পৌছুই। এরপর প্রথমেই কান্তজিউ মন্দির দেখতে যাই। ঢেপা নামক একটি নদী পেরিয়ে কান্তনগর গ্রামে এই প্রাচীন স্থাপত্যটি  অবস্থিত।  কান্তনগর বা  নবরত্ম মন্দির নামেও এটি সুপরিচিত। শিলালিপি অনুযায়ী তৎকালীন জমিদার প্রাণনাথ রায় এটি তৈরী করেন। মন্দিরের সবথেকে মুগ্ধ করবে দেয়ালের টেরাকোটাগুলো। অসাধারণ লেগেছে আমার!! উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে প্রায় ১৫ হাজার টেরাকোটা রয়েছে এখানে। ধর্মীয় উপাসনালয় হওয়ায় উপরে উঠতে দেয়া হয়না আর আমার মনে হয় ঘুরতে গেলে উপরে উঠাও উচিৎ হবেনা কারো। 

এরপর এই কান্তজিউ মন্দিরের আশেপাশেই অবস্থিত কান্তনগর প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘরেও একটু ঢু মেরেছিলাম। ভিতরে বেশ ভালই পুরোনো জিনিসপত্র রয়েছে। তবে ছবি তোলা নিষেধ থাকায় ভিতরে ছবি তুলতে পারিনি। ১০-২০ টাকার টিকিট কেটে ঢুকলে লস হবেনা এতটুক বলতে পারি। 

এরপর সোজা চলে যাই কাহারোল উপজেলায় অবস্থিত নয়াবাদ মসজিদে। প্রায় ৪২৯ বছর আগে ১৭৯৩ সাথে এটি তৈরী করা হয়। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটি চারটি মিনার আছে। তবে প্রতিষ্টাকালে যে সুন্দর পোড়ামাটির কাজগুলো ছিল তা রেনোভেশনের পর তা খুব একটা নেই। হয়তো রক্ষণাবেক্ষণের অভাব!!

পরের ডেস্টিনেশন হচ্ছে দিনাজপুরের রাজবাড়ী। কিছু লিচুবাগান চোখে পড়ল, সময়টা গ্রীষ্মকাল হলে মন্দ হতনা! লিচু খাওয়া হয়ে যেত ট্যুরের সাথে সাথে! যাহোক হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চা খেতে খেতে বাকি দিনের ট্যুর প্লান কিছুটা হলেও করে ফেললাম ম্যাপ দেখে। অতঃপর জুম্মার নামাজ সেরে নিলাম পথিমধ্যেই। আর খিদা লাগায় মিলাদের তবারকটা মিস করলাম নাহ। হেহে। এটা আমার ভাল্লাগে। সেই ছোট বেলায় এই জুম্মার দিন এলে কলার পাতায় করে পায়েস দেয়া হত (ছিন্নি বলতাম আর কি)। এটা বেশ মিস করি এখন!

রাজবাড়ী পৌছে বেশ হতাশই হলাম বলতে পারেন। রেনোভেট করে সুন্দর করছে কিছুটা কিন্তু কেন যেন পুরাকীর্তির ফিলটা পাইলাম নাহ।

এরপর পাশেই অবস্থিত সুখসাগরে একটু সুখের খোঁজে গেলাম। হেহে! খারাপ নাহ। জিরিয়ে নেয়ার জন্য ভাল একটি যায়গা। কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত করে চললাম রামসাগরের দিক! ভাবলাম এটাও নাহয় কাভার দেই!  এটি কিন্তু বাংলাদেশের সব থেকে বড় মানবসৃষ্ট দিঘী। ভিতরে একটা ছোট্ট চিড়িয়াখানাও আছে, সেখানে অজগরের দেখাও মিলবে, সাথে আছে বানর/হনুমান/হরিণ এসবই আর কি! 

প্রায় বিকেল হয়ে যাচ্ছে, খিদা তো ভালই লেগে গেছে। আশে পাশে ভাল হোটেল খুঁজতে বেশ সময় লাগিয়ে ফেললাম। এরপর মোটামুটি মানের একটি হোটেলে বসে দুপুরের খাবারটি খেয়ে নিলাম। অসাধারণ ছিল খাবারগুলোর কোয়ালিটি, আর বিলও বেশ কম এসেছিল কেন জানি! পুরাই তৃপ্তিসহকারে খেয়ে একদম পেট ভরায় ফেলছিলাম। 😀

বিরলে অবস্থিত চঞ্চল রিসোর্ট যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা শেষ ডেস্টিনেশন হিসেবে! বেশ দুরেই অবস্থিত ছিল তবুও গেলাম। আহামরি তেমন কিছু না থাকলেও ওভারল ভালই লাগলো বলতে পারেন। কিছুক্ষণ সময় কাটানোর পর সুর্যাস্তের ঠিক কাছাকাছি সময়ে আমরা কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। এবং আল্লাহ রহমতে ভালভাবেই কুড়িগ্রাম পৌছে যাই গভীর রাত হওয়ার আগেই। 

শুক্রবার, মার্চ ৫, ২০২১ 



Share This Article

2-removebg-preview

About Touhid

Hey! My full name is S M Touhidul Islam, a marketing professional and tech enthusiast from Bangladesh.

Share This Article